📰 জয়পুরহাটে সবজির দাম রেকর্ড পরিমাণে বেড়েছে, নিম্ন আয়ের মানুষ দিশেহারা
- ◾সবজির দাম আকাশছোঁয়া জয়পুরহাটে। কাঁচামরিচ থেকে শিম—সব সবজির দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়ায় সাধারণ মানুষ হিমশিম খাচ্ছে। জানুন কেন আকাশে মেঘ দেখলেই সবজির দাম বেড়ে যায়।
📝 জয়পুরহাট প্রতিনিধি : সবজির দাম নিয়ে আবারও উত্তাল হয়ে উঠেছে জয়পুরহাটের বাজার। নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য যেন এক দুঃসহ সময় বয়ে আনছে এই অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি। ক্রেতাদের অভিযোগ, “আকাশে মেঘ দেখলেই সবজির দাম বাড়ে।”
সবজির দাম বেড়ে ক্রেতাদের হাঁসফাঁস
শুক্রবার (৩ অক্টোবর) সরেজমিনে জয়পুরহাট শহরের বিভিন্ন কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায়, একমাত্র পেঁপে ছাড়া কোনো সবজিই ৬০ টাকার নিচে নেই। পেঁপে পাওয়া যাচ্ছে ৩০ টাকা কেজি দরে। কিন্তু অন্যান্য সবজির দাম যেন নিয়ন্ত্রণের বাইরে।
বেগুন কেজি ১০০ টাকা
করলা কেজি ১০০ টাকা
মিষ্টি লাউ কেজি ৬০ টাকা
ঢ্যাঁড়স কেজি ৬০ টাকা
বরবটি কেজি ৬০-৮০ টাকা
পটোল কেজি ৬০-৭০ টাকা
শিম কেজি ২৪০ টাকা
মুলা কেজি ৬০ টাকা
শজিনা কেজি ২০০ টাকা
কচুর লতি ৬০ টাকা
আলু কেজি ২০-২৫ টাকা
লাউ প্রতিটি ৬০ টাকা
পেঁয়াজ কেজি ৭০ টাকা
কাঁচামরিচের দাম যেন আগুন
তিন দিন আগেও কাঁচামরিচের কেজি ছিল ২০০ টাকা। হঠাৎ করেই দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা কেজি। ক্রেতারা বলছেন, এভাবে দাম বাড়তে থাকলে বাজার থেকে সবজি কেনাই কঠিন হয়ে পড়বে।
ক্রেতাদের ক্ষোভ : “আকাশে মেঘ দেখলেই সবজির দাম বাড়ে”
পূর্ব কাঁচাবাজারে সবজি কিনতে আসা ময়নুল ইসলাম ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, “আকাশে মেঘ দেখলেই সবজির দাম বাড়ে। এমনকি বৃষ্টি না হলেও বাজারে অজুহাত তৈরি হয়ে যায়। ২০০ টাকার মরিচ ২৫০ টাকা হয়ে যায় মুহূর্তেই।”
সরদারপাড়ার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী শাহিন বলেন, “রোজার সময়ও এত দাম ছিল না। এখন প্রতিদিন বাজারে গেলে বাজেট ভেঙে যায়।”
রিকশাচালক আমিনুর রহমান জানালেন, “গ্রামের বাজারেও একই অবস্থা। আয় বাড়েনি, কিন্তু সবজির দাম তিনগুণ বেড়েছে। সংসার চালানো দুঃসাধ্য।”
ব্যবসায়ীদের দাবি : বর্ষার কারণে আমদানি কম
জয়পুরহাট শহরের সবজি ব্যবসায়ী খায়রুল ইসলাম জানান, “বর্ষার কারণে কৃষক পর্যায়ে উৎপাদন কম হয়েছে। আমরা কৃষকের কাছ থেকে বেশি দামে কিনে সামান্য লাভে বিক্রি করি। সবজি বিক্রি না হলে পচে যায়, তখন আমাদের লোকসান হয়।”
আরেক বিক্রেতা বাবু হোসেন বলেন, “এ সময় প্রতি বছর দাম একটু বেশি থাকে। নতুন সবজি বাজারে আসলেই দাম কমে যাবে।”
কেন বাড়ছে সবজির দাম?
বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশে বর্ষাকালে সবজি উৎপাদন কমে যায়। জমিতে পানি জমে কৃষকরা ফসল তোলায় সমস্যায় পড়েন। ফলে সরবরাহ কমে যায়, আর সেই সুযোগে বাজারে দাম বাড়ে।
এ ছাড়া বাজারে কোনো নিয়ন্ত্রণ না থাকায়, একেকজন বিক্রেতা নিজেদের মতো করে দাম বাড়ান। এভাবে অল্প সময়ে সবজির দাম কয়েকগুণ বেড়ে যায়।
নিম্ন আয়ের মানুষের আর্তনাদ
দাম বৃদ্ধির কারণে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়ছেন নিম্ন আয়ের মানুষরা। প্রতিদিনের আয় থেকে পরিবার চালানোই কষ্টকর হয়ে উঠছে। এক রিকশাচালক বলেন, “আমরা কি মরিচ খাবো, না ভাত খাবো বুঝতে পারছি না। সবজি কিনলেই বাচ্চাদের খরচ কমাতে হয়।”
সরকারের করণীয়
ভোক্তাদের দাবি, সরকারকে দ্রুত বাজার নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। স্থানীয় প্রশাসনের তদারকি বাড়ানো উচিত। নাহলে এই অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি দেশের সাধারণ মানুষের জীবনকে আরও দুর্বিষহ করে তুলবে।
সবজির দাম এখন শুধু জয়পুরহাট নয়, দেশের প্রায় সব বাজারেই উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। “আকাশে মেঘ দেখলেই সবজির দাম বাড়ে”—এই অভিযোগ আজ সাধারণ মানুষের মুখে মুখে। এখন প্রয়োজন কার্যকর বাজার তদারকি, যাতে মানুষের জীবনে স্বস্তি ফেরে।
♻️ আরো পড়ুন:☞ মিরপুরে বাসে গুলি ও আগুন: আতঙ্কে যাত্রীরা | বাসে হামলার ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়ালো রাজধানীতে

