“আরপিও সংশোধনের পথে নির্বাচন কমিশন: সেনাবাহিনী পাবে পূর্ণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষমতা, বাড়বে ভোটারদের আস্থা”
📝 বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেনাবাহিনী নিয়োগের সিদ্ধান্ত ভোটারদের আস্থা ফিরিয়ে আনবে কি? নির্বাচন কমিশন আরপিও সংশোধন করে সেনা বাহিনীকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পূর্ণ ক্ষমতায় অন্তর্ভুক্ত করছে। জানুন এই বড় পরিবর্তনের বিস্তারিত।
ডেস্ক রিপোর্ট : বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বড় পরিবর্তনের আভাস মিলছে। নির্বাচনে সেনাবাহিনী নিয়োগ নিয়ে দীর্ঘদিনের বিতর্ক ও অনিশ্চয়তার অবসান ঘটাতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেনাবাহিনী শুধু ‘স্ট্রাইকিং ফোর্স’ হিসেবেই নয়, বরং অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মতো পূর্ণ ক্ষমতায় দায়িত্ব পালন করবে—এমনটাই জানিয়েছে ইসি।
এই লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ (আরপিও) সংশোধন করে সেনাবাহিনীকে আইন প্রয়োগকারী বাহিনী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব প্রস্তুত করেছে, যা চলতি সপ্তাহেই প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে পাঠানো হবে। ফলে সেনাবাহিনী আর সরকারের অনুমোদনের অপেক্ষায় থাকবে না, বরং নির্বাচন কমিশনের সরাসরি নির্দেশনায় কাজ করবে।
নির্বাচনে সেনাবাহিনীর ভূমিকা বদলে যাচ্ছে
নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ জানান, আগে পুলিশ, কোস্টগার্ড ও বিজিবির মতো বাহিনী থাকলেও সেনাবাহিনীকে তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল ২০০৮ সালের পর। এবার সেই ধারা বদলে যাচ্ছে। তিনি বলেন, “আমরা আরপিও সংশোধন করে সেনাবাহিনীকে অন্তর্ভুক্ত করেছি। এবার তারা স্বাধীনভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পালন করতে পারবে।”
ভোটারদের আস্থা ফিরবে?
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, নির্বাচনে সেনাবাহিনী নিয়োগ ভোটারদের আস্থা ফিরিয়ে আনবে। সাবেক সেনা কর্মকর্তা মেজর (অব.) এমদাদুল ইসলাম বলেন, “এখন আর সরকারের অনুমোদনের জন্য অপেক্ষা করতে হবে না। সেনাবাহিনী সরাসরি কমিশনের নির্দেশে কাজ করবে। এতে সুষ্ঠু নির্বাচনের সম্ভাবনা বাড়বে।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাব্বির আহমেদ বলেন, “বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সেনাবাহিনীকে পূর্ণ ক্ষমতা না দিলে নির্বাচনকে সুষ্ঠু বলা যাবে না। ২০১৮ সালের নির্বাচনে পুলিশের ভূমিকা আস্থার সংকট তৈরি করেছে।”
কেমন হবে এই নতুন কাঠামো?
সংশোধনী পাস হলে সেনা সদস্যরা ম্যাজিস্ট্রেসি ও পুলিশি ক্ষমতা উভয়ই পাবে। তারা ভোটকেন্দ্রের বাইরে অপেক্ষমাণ বাহিনী হিসেবে নয়, সরাসরি আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত থাকবে। ফলে কোনো অনিয়ম বা অপরাধ ঘটলে বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার করতে পারবে।
সরকারের ওপর নির্ভরতা কমবে
অতীতে নির্বাচন কমিশন সেনাবাহিনী চাইলেও তা পায়নি এমন নজির রয়েছে। এবার সেই বাধা দূর হবে। এমদাদুল ইসলাম বলেন, “এখন সরকারের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে না। কমিশন সরাসরি সেনা সদর দপ্তরের সঙ্গে আলোচনা করবে।”
সেনা মোতায়েনের পরিসংখ্যান
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানিয়েছেন, নির্বাচনে ৮০ হাজারের বেশি সেনা সদস্য মোতায়েন করা হবে। এছাড়া দেড় লাখ পুলিশ, বিজিবি, কোস্টগার্ড ও আনসারও মাঠে থাকবে।
নির্বাচনের স্বচ্ছতায় প্রভাব
আইনজীবী অ্যাডভোকেট আহসানুল করিম বলেন, “আগে সেনারা স্ট্রাইকিং ফোর্স ছিল, কিন্তু এবার তারা পূর্ণ ক্ষমতা নিয়ে দায়িত্ব পালন করলে প্রভাব বিস্তারের সুযোগ কমবে।”
কেন জরুরি এই সিদ্ধান্ত?
নির্বাচন কমিশনের মতে, দেশের ভোটারদের মধ্যে আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে। তাই শুধু জাতীয় সংসদ নয়, সব নির্বাচনে সেনাবাহিনী থাকবে। এতে নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য হওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে।
এই আরপিও সংশোধন রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে কার্যকর হলে বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থায় এক যুগান্তকারী পরিবর্তন আসবে। নির্বাচনে সেনাবাহিনী নিয়োগ শুধু নিরাপত্তা জোরদার করবে না, বরং রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ কমিয়ে জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তথ্যসূত্র
📰আরো পড়ুন:☞ চট্টগ্রামে মোটেল সৈকত বার অ্যান্ড রেস্টুরেন্টে ভয়াবহ আগুন: বড় ক্ষতির আশঙ্কা