📰 কর ফাঁকি রক্ষায় এসএ গ্রুপের কর্ণধার সালাহ উদ্দিনের সঙ্গে কোটি টাকার ঘুষচুক্তি, ঘুষের টাকায় আয়কর নথি হস্তান্তরের প্রমাণ পেয়েছে দুদক!
- ◾দুদক পেয়েছে সহকারী কর কমিশনার জান্নাতুল ফেরদৌস মিতুর বিরুদ্ধে কোটি টাকার ঘুষচুক্তির প্রমাণ। এসএ গ্রুপের কর্ণধার সালাহ উদ্দিন ও তার আইনজীবী ওবায়দুল হকের সঙ্গে ঘুষ লেনদেনে ফাঁস রাজস্ব চুরির চাঞ্চল্যকর তথ্য।
📝ডেস্ক রিপোর্ট :
কর ফাঁকির ভয়ংকর এক কেলেঙ্কারি ফাঁস করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আওতাধীন কর অঞ্চল-৫-এর আলোচিত সহকারী কর কমিশনার জান্নাতুল ফেরদৌস মিতু জড়িত রয়েছেন ১ কোটি টাকার ঘুষচুক্তিতে—এমন প্রমাণ মিলেছে দুদকের অভিযানে।
দুদকের এনফোর্সমেন্ট টিমের হাতে এসেছে এমন সব দলিল যা দেখলে চমকে উঠবেন যে কেউ। অভিযোগ, এসএ গ্রুপের কর্ণধার সালাহ উদ্দিন আহমেদ ও তার আইনজীবী ওবায়দুল হক সরকার ১২ করবর্ষের আয়কর ফাইল সাজিয়ে ২৩৭ কোটি ৫৯ লাখ টাকার আয় গোপন করার পরিকল্পনায় ঘুষের চুক্তি করেন কর কর্মকর্তার সঙ্গে। এরই অংশ হিসেবে জান্নাতুল ফেরদৌস মিতু ঘুষ হিসেবে ৩৮ লাখ টাকা গ্রহণ করেন এবং বিনিময়ে পুরোনো আয়কর রিটার্নসহ স্পর্শকাতর নথি হস্তান্তর করেন।
অভিযান ও প্রাথমিক প্রমাণ
রোববার (৫ সেপ্টেম্বর) কর অঞ্চল-৫ অফিসে অভিযান চালায় দুদকের এনফোর্সমেন্ট টিম। অভিযান শেষে দুদক জানায়, ঘুষের বিনিময়ে সরকারি গোপন নথি সরবরাহের প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়া গেছে।
অভিযানে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা মেলে এবং ৩৮ লাখ টাকার ঘুষে কর ফাইল হস্তান্তর সংক্রান্ত রেকর্ডপত্র জব্দ করা হয়।
দুদকের বিবৃতিতে বলা হয়, কর অঞ্চল-৫-এর অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে বিপুল পরিমাণ কর ফাঁকি ও রাষ্ট্রীয় রাজস্ব ক্ষতির প্রমাণ পাওয়া গেছে। টিম ঘটনাস্থল থেকে গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র সংগ্রহ করে এবং পূর্ণাঙ্গ তদন্ত প্রতিবেদন কমিশনে দাখিলের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
কোটি টাকার গোপন চুক্তি
এনবিআর সূত্র জানায়, করদাতা সালাহ উদ্দিন আহমেদের আইনজীবী ওবায়দুল হক সরকার কর সার্কেলের কর্মকর্তা জান্নাতুল ফেরদৌস মিতুর সঙ্গে ১ কোটি টাকার গোপন ঘুষচুক্তি করেন।
লক্ষ্য ছিল—সালাহ উদ্দিনের কর ফাইল সাজিয়ে এমনভাবে প্রস্তুত করা যেন তার ১২ করবর্ষের আয় ‘করমুক্ত সেবা খাত’-এ দেখানো যায়।
এই কৌশলে ২৩৭ কোটি টাকার আয় গোপন করে বিপুল কর ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ তৈরি হয়।
এমনকি সালাহ উদ্দিন আগে আপিল, ট্রাইব্যুনাল এবং হাইকোর্ট পর্যন্ত গিয়েও নিজের পক্ষে রায় পাননি।
শেষ পর্যন্ত ঘুষ দিয়েই সমাধান খুঁজতে চেয়েছিলেন তারা।
ঘুষের টাকা পরিশোধ ও ফাইল বদলানোর নাটক
চুক্তি হওয়ার পর ওবায়দুল হক সরকার জান্নাতুল ফেরদৌস মিতুকে ৩৮ লাখ টাকার ঘুষ প্রদান করেন।
এরপর তিনি কর সার্কেল থেকে সম্পূর্ণ ফাইল নিজের চেম্বারে নিয়ে গিয়ে পুরোনো রিটার্ন পরিবর্তন করেন।
এভাবেই ১২ বছরের পুরোনো আয়কর রিটার্নে ‘সাজানো তথ্য’ সংযোজন করা হয়।
এনবিআরের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা ইউনিটের তদন্তে এসব অবৈধ কার্যক্রমের বিস্তারিত বেরিয়ে আসে।
এমনকি ঘুষের টাকা আদানপ্রদানের ডিজিটাল লেনদেনের রেকর্ডও উদ্ধার করেছে তদন্ত টিম।
দুদকের কঠোর পদক্ষেপ
ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় গত ১ সেপ্টেম্বর জান্নাতুল ফেরদৌস মিতুকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
একই সঙ্গে করদাতা সালাহ উদ্দিন আহমেদ ও আইনজীবী ওবায়দুল হক সরকারের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে।
দুদক কর্মকর্তাদের দাবি, “এই মামলাটি হচ্ছে এনবিআরের ইতিহাসে অন্যতম বড় ঘুষকেলেঙ্কারি। আমরা প্রমাণ পেয়েছি, ঘুষের বিনিময়ে রাষ্ট্রীয় রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে কয়েক কোটি টাকার।”
জনমনে প্রতিক্রিয়া
ঘটনাটি প্রকাশের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়েছে।
অনেকে বলছেন, “দেশের রাজস্ব কর্মকর্তারা যদি ঘুষের বিনিময়ে ফাইল সাজিয়ে দেন, তাহলে সাধারণ মানুষ কর দেবে কেন?”
অন্যরা দাবি করেছেন, “দুদক যেন এই ঘটনার বিচার দ্রুত সম্পন্ন করে এবং অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়।”
দুদকের বার্তা
দুদক সূত্র জানিয়েছে, এই মামলায় ফৌজদারি মামলা করার প্রস্তুতি চলছে।
প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্ট কমিশনের হাতে গেলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করা হবে।
কমিশনের এক পরিচালক বলেন
- > “আমরা দুর্নীতি প্রতিরোধে শূন্য সহনশীল নীতি গ্রহণ করেছি। কর কর্মকর্তাদের এমন কর্মকাণ্ড রাষ্ট্রের জন্য হুমকি। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।”
তদন্তের পরবর্তী ধাপ
🔹 এনবিআরের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা ইউনিট, দুদকের মূল কার্যালয় ও অর্থ মন্ত্রণালয় যৌথভাবে তদন্তে নেমেছে।
🔹 অভিযুক্তদের মোবাইল কললিস্ট, ব্যাংক ট্রানজেকশন ও ডিজিটাল পেমেন্ট ডেটা যাচাই করা হচ্ছে।
🔹 দুদক বলেছে, “প্রয়োজনে অর্থ পাচার আইনে মামলা করা হবে।”
বিশ্লেষণ: রাষ্ট্রীয় রাজস্বে বড় আঘাত
এই এক ঘটনায় রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ক্ষতি হতে পারত কয়েক শ কোটি টাকা।
যদি দুদক সময়মতো অভিযান না চালাত, তাহলে এই ঘুষের টাকার বিনিময়ে বিশাল কর ফাঁকি বৈধ হয়ে যেত।
অর্থনীতিবিদদের মতে,
- > “দুর্নীতিগ্রস্ত কর কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে রাজস্ব আয় বাড়ানো অসম্ভব হয়ে পড়বে।তথ্যসূত্র
♻️ আরো পড়ুন:☞ পরীমণি স্বীকার করলেন: ‘ইসমাইল ছিল আমার সৎস্বামী’ — বিয়ে, প্রেম ও গুঞ্জন নিয়ে নতুন স্পষ্টীকরণ

