- ◼ “ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল ঘোষণা — ২০১৮ সালের সব মামলা বন্ধ হচ্ছে, সাজাপ্রাপ্ত বা অভিযুক্ত সবাই মুক্তি পাচ্ছেন, নতুন সাইবার সুরক্ষা ও তথ্য-সুরক্ষা অধ্যাদেশ অনুমোদিত”
📰 নতুন সংশোধনীতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের ধারা কার্যকর হওয়ায় ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল’ ঘোষণা ভরিয়ে তুলেছে অনশন-আন্দোলন থেকে মুক্তির স্বপ্ন
📝 ডেস্ক রিপোর্ট :
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ প্রবর্তিত হওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন সমাজমাধ্যম, সাংবাদিক ও নাগরিক অধিকার গ্রুপ প্রায় মাস দেড়েক অন্তর এই আইন “নির্যাতনমূলক” হিসেবে অভিযুক্ত করেছেন। অনেককে অভিযোগ করা হয়েছে – সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরকারি নীতি, দুর্নীতি বা ক্ষমতাসীনদের সমালোচনা — যা “জাতির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন” বা “প্রচারণা” হিসেবে ধরা হতো।
মাঝে human rights গ্রুপগুলো বলেছে, এই আইন সংবাদ স্বাতন্ত্র্য ও স্বাধীন মতপ্রকাশের ওপর “হুমকি” সৃষ্টি করেছে।
এমন অবস্থায়, “ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল” দাবির পেছনে ছিল একদল ট্রাইবুনাল মামলার রদ করার মনোভাব ও সমালোচনার ভয়।
সিদ্ধান্তের সারমর্ম
বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে — ২০১৮ সালের ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন (যা বর্তমানে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নামে পরিচিত) এর অধীনে সমস্ত মামলা বাতিল ঘোষণা করা হবে।
এই সিদ্ধান্তের ফলে —
সংশ্লিষ্ট ধারা ২১, ২৪, ২৫, ২৬, ২৭, ২৮, ২৯ ও ৩১ — এবং এমন ধারা যেগুলোতে ‘সহায়তা’ অভিযোগ রয়েছে — সব মামলা ও তদন্ত কার্যক্রম বাতিল বলে গণ্য হবে।
এই ধারা সংশ্লিষ্ট সাজা ও জরিমানাও বাতিল হবে।
উক্ত ধারা অনুযায়ী সাজাপ্রাপ্ত ও অভিযুক্ত সবাই মুক্তি পাবে।
পাশাপাশি উপরোক্ত আইন সংশ্লিষ্ট নতুন অধ্যাদেশের সঙ্গে সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ ২০২৫, ব্যক্তিগত ডেটা সুরক্ষা অধ্যাদেশ ২০২৫ এবং জাতীয় উপাত্ত সুরক্ষা অধ্যাদেশ ২০২৫ অনুমোদন করা হয়েছে।
সরকারি দৃষ্টিতে, এই পরিবর্তনের লক্ষ্য হলো — জনগণের ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা ও ডিজিটাল জায়গায় অধিক আস্থা গড়াই।
সংশোধনী অধ্যাদেশে কি বলা হয়েছে
নতুন সংশোধনী অনুযায়ী —
ধারা ২১, ২৪, ২৫, ২৬, ২৭, ২৮, ২৯ ও ৩১ এবং তাদের “সহায়তা” অংশের অধীনে চলমান সব মামলা, তদন্ত ও কার্যক্রম বাতিল বলে গণ্য হবে।
ওই ধারা অনুযায়ী দেওয়া সাজা ও জরিমানাও বাতিল হবে।
নতুন আইনটি ডিজাইন করা হয়েছে citizen-centric (নাগরিক-কেন্দ্রিক) — যাতে তথ্য ও গোপনীয়তা (privacy) বিষয়ে অধিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা যায়।
নতুন আইন বলবে — অভিযোগ ও বিচার প্রক্রিয়ায় গোপন তথ্য উত্তোলন বা অন্যায় দমনমূলক প্রয়োগ সীমিত হবে।
প্রথম ধাপ হিসেবে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করা হলেও, ভবিষ্যতে আইন প্রয়োগে safeguards (রক্ষা ব্যবস্থাপনা) হবে।
মুক্তি প্রক্রিয়া ও আগামী ধাপ
এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে নিম্নলিখিত ধাপগুলি থাকতে পারে:
আদেশ প্রকাশ ও গেজেট প্রকাশ: সংশোধনী আইন ও বাতিলের ঘোষণা গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে।
আদালত ও সংশ্লিষ্ট বোর্ডের নির্দেশ: উচ্চ আদালত, জেলা আদালত, ট্রাইব্যুনাল এগুলো নির্দেশ পাবে — মামলাগুলি রদ করতে, সাজাপ্রাপ্তদের মুক্তি দিতে।
জেল ও কারাগার ব্যাবস্থা: সাজাপ্রাপ্তদের কারাগার থেকে দ্রুত মুক্তি কার্যকর করা হবে।
সংশ্লিষ্ট দফতর ও আইনশৃঙ্খলা সংস্থা: পলিসি ও প্রশাসনিক নির্দেশনা গ্রহণ করবে যাতে নতুন ডেটা সুরক্ষা ও সাইবার সুরক্ষা আইন সুষ্ঠুভাবে কার্যকর হয়।
নাগরিক ও সংবাদ মাধ্যমের নজরদারি: নতুন পরিবর্তন স্বচ্ছভাবে ও দ্রুত বাস্তবায়িত হচ্ছে কি না, সে বিষয়ে নজরদারি থাকতে হবে।
বিশ্লেষণ ও প্রতিক্রিয়া
✅ ইতিবাচক দিক
পুরাতন “ভয় ছড়ানো” আইনে যাঁরা দণ্ডপ্রাপ্ত বা মামলায় অভিযুক্ত ছিলেন, তাঁরা মুক্তি পেলেন — এটি মানবাধিকার ও প্রক্রিয়াগত ন্যায়ের বড় পদক্ষেপ।
নতুন আইনগুলোর মাধ্যমে ব্যক্তিগত তথ্য ও ডিজিটাল গোপনীয়তায় প্রতিশ্রুতি গুরুত্বপূর্ণ।
সমালোচকরা বলেতেই পারেন — সরকারের ওপর চাপ বাড়লে আইন সংশোধন করা হয়েছে — তবে বাস্তব পদক্ষেপ বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
চ্যালেঞ্জ ও উদ্বেগ
“ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল” হলে কি সত্যিই মোহড়া হবে, নাকি নতুন আইনেও ক্রমাগত কড়াকড়ি থাকবে?
নতুন সাইবার সুরক্ষা আইন যদি পুরনো ধারা অনেকাংশে পুনর্লিপি করে, তাহলে সমস্যার মূলে কোনো পরিবর্তন হবে না।
বিচারপতি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনের সক্ষমতা — নতুন আইন প্রয়োগে তারা প্রস্তুত কি?
নাগরিক ও মিডিয়া কর্মীদের জন্য এই পরিবর্তন কেমন প্রভাব ফেলে — তারা কি পুরনো ভয় থেকে মুক্তি পাবে?
রাজনীতি ও স্বার্থের লবিকে আইন প্রয়োগের ধরন ঠিক থাকবে কি না — সেটি জনগণের নজরদারিতেই নির্ধারিত হবে।
নাগরিক ও মিডিয়া সেক্টরের প্রশ্ন ও উদ্বেগ
প্রশ্ন
সম্ভাব্য উদ্বেগ
বলা যেতে পারে …
নতুন আইন কি পুরনো সমস্যার পুনরাবৃত্তি করবে?
যদি ধারা কঠোরভাবে লেখা থাকে
আইন প্রণয়ন আয়োজন স্বচ্ছ হতে হবে
মুক্তি কত দ্রুত হবে?
প্রশাসনিক জটিলতায় দেরি হতে পারে
স্পষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ জরুরি
মিডিয়া ও সাংবাদিকদের সুরক্ষা কেমন হবে?
আগের মতো ভয় থাকলে স্বাধীনতা দমন হতে পারে
নতুন আইন অংশকে বিশেষভাবে নির্ধারণ করা উচিত
তথ্য নিরাপত্তা সত্যিই পূর্ণ হবে?
প্রযুক্তিগত ও প্রশাসনিক দুর্বলতা থাকলে
প্রযুক্তি, ই-গভর্নেন্স ও oversight বাড়ানো জরুরি
সমাপনী মন্তব্য
ফোকাস কিওয়ার্ড হিসেবে “ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল”কে কেন্দ্র করে বলা যেতে পারে — এই পদক্ষেপ রাষ্ট্র ও নাগরিক জীবনে এক দারুণ মোড়। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের ঘোষণাটি একটি সংকেত যে, দেশের সরকার পরিবর্তন ও সমন্বয়শীল সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম। তবে শুধু শিরোনাম বা ঘোষণা নয় — কর্মযজ্ঞ ও বাস্তব বদলই আসল বিষয়।
নাগরিক, সাংবাদিক, আইনজ্ঞ ও মানবাধিকারকর্মীদের এখন অপেক্ষা — ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল ও নতুন অধ্যাদেশের বাস্তব প্রভাব দেখার। এই নতুন যুগে সংবাদ স্বাধীনতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও তথ্য গোপনীয়তার অধিকার যেন নিশ্চিত হয় — সে দিকেই সবার নজর থাকা উচিত। তথ্যসূত্র
♻️ আরো পড়ুন:☞ সাইবার হামলার শঙ্কা: বিমানবন্দরে সতর্কতা জারি — ১০টি কঠোর নির্দেশনা প্রকাশ

