ডিএনসিসির অভিযানে বৈধ কফিশপ ভাঙচুর, সাংবাদিক করিমের ক্ষোভ – “ফুটপাত দখলকারীরা অক্ষত রইল, নিয়ম মানা ব্যবসা ভাঙল”
📝 গুলশানে সাংবাদিক মুনজুরুল করিমের কফিশপ ভাঙচুরের অভিযোগে তোলপাড়। ডিএনসিসির অভিযানে বৈধ দোকানে ভাঙচুর চালানো হলেও ফুটপাত দখলকারীরা অক্ষত রইল। বিস্তারিত পড়ুন।
ডেস্ক রিপোর্ট : গুলশানে সাংবাদিক মুনজুরুল করিমের কফিশপ ভাঙচুর নিয়ে বিতর্ক
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মারুফা বেগম নেলীর অভিযানে গুলশানে সাংবাদিক মুনজুরুল করিমের কফিশপ ভাঙচুর করার অভিযোগ উঠেছে। সোমবার (১৮ আগস্ট ২০২৫) দুপুরে গুলশান-২ এর ল্যান্ডমার্ক সেন্টারে অবস্থিত জনপ্রিয় কফিশপ ‘ওরোমো’-তে এ ঘটনা ঘটে।
জনপ্রিয় অনুসন্ধানী সাংবাদিক ও সাবেক টিভি উপস্থাপক মুনজুরুল করিম ফেসবুক পোস্টে অভিযোগ করেন, গুলশানে অসংখ্য অবৈধ ভ্রাম্যমাণ দোকান বছরের পর বছর ফুটপাত দখল করে ব্যবসা চালালেও প্রশাসনের নজর নেই। অথচ নিয়ম মেনে পরিচালিত বৈধ কফিশপে হঠাৎ অভিযান চালানো হলো।
তিনি লিখেন,
“গুলশান-২ এর রংপুর চায়ের দোকান আর বার্গার কিং-এর গলি পুরোপুরি রাস্তা দখল করে ব্যবসা চালাচ্ছে। অথচ আজ বৈধভাবে ব্যবসা করা আমাদের কফিশপে ভাঙচুর চালানো হলো। এর পেছনে ব্যক্তিগত স্বার্থ বা অন্য কোনো কারণ থাকতে পারে।”
ছয় বছরের সুনাম একদিনেই প্রশ্নবিদ্ধ
মুনজুরুল করিম বলেন, গত ছয় বছর ধরে তিনজন পার্টনার মিলে এই কফিশপ পরিচালনা করে আসছেন। এটি ল্যান্ডমার্ক সেন্টারের ১ নম্বর দোকান, এবং দোকানটির পজিশনের মালিকও ব্যবসার অংশীদার।
তার অভিযোগ, “ওরোমোর আশপাশে অবৈধ ভ্রাম্যমাণ দোকান থাকা সত্ত্বেও সেগুলো উচ্ছেদ করা হয়নি। বরং বৈধ দোকানে ভাঙচুর চালানো হয়েছে। কিছু সরঞ্জামও জব্দ করা হয়েছে।”
অন্য পার্টনার আসলাম বিশ্বাস জানান, “দুই যুগ আগে এই মার্কেটের দোকানের পজিশন আমরা কিনে নিয়েছি। বৈধভাবে ব্যবসা করছি। তবুও কোনো নোটিশ ছাড়া অভিযান চালানো হয়েছে। এটি নিয়মবহির্ভূত।”
প্রশাসনের বক্তব্য ও পাল্টা অভিযোগ
এ বিষয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মারুফা বেগম নেলী বলেন, “এটি ডিএনসিসির নিয়মিত উচ্ছেদ কার্যক্রমের অংশ। দোকানের সামনে ফুটপাতে মালামাল রাখা হয়েছিল এবং শেড দেওয়া ছিল, সেগুলোই উচ্ছেদ করা হয়েছে।”
তবে দোকানের মালিক পক্ষ বলছে, “ফুটপাতের জায়গা নয়, বরং মার্কেটের নিজস্ব জায়গায় দোকানের শেড দেওয়া হয়েছিল। এর আগে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল, যা সমাধানও হয়েছে। কিন্তু এবার ইচ্ছাকৃতভাবে অভিযান চালানো হয়েছে।”
সরেজমিনে দেখা চিত্র
সরেজমিনে দেখা যায়, আশপাশের বেশ কয়েকটি ভবনে স্থায়ী শেড দেওয়া আছে। কিন্তু সেগুলোর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এমনকি প্রতিদিন বিকেলের পর থেকে গুলশান-২ নম্বর সড়কে ফুটপাত দখল করে ব্যবসা চললেও প্রশাসনের কোনো পদক্ষেপ চোখে পড়েনি।
ফলে স্থানীয় ব্যবসায়ী মহলে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন—“আইনের প্রয়োগ কি শুধু বৈধ ব্যবসার ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ? নাকি এর পেছনে কোনো ব্যক্তিগত স্বার্থ কাজ করছে?”
ব্যবসায়ী মহলের প্রতিক্রিয়া
গুলশানের ব্যবসায়ী সমিতির কয়েকজন সদস্য জানিয়েছেন, এভাবে বৈধ দোকানকে টার্গেট করা হলে বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এতে ব্যবসায়িক পরিবেশ নষ্ট হবে এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও নিরুৎসাহিত হবেন।
একজন ব্যবসায়ী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,
“আমরা কোটি কোটি টাকা খরচ করে বৈধভাবে দোকান কিনি, ট্যাক্স দিই, অথচ একদিনে সব ধ্বংস হয়ে যায়। অপরদিকে ফুটপাত দখলকারীরা রয়ে যায় অক্ষত।”
সোশ্যাল মিডিয়ায় তোলপাড়
ঘটনার পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। অনেকেই লিখেছেন, ‘গুলশানের মতো এলাকায় বৈধ কফিশপ ভাঙচুর করে প্রশাসন প্রমাণ করেছে—এখানেও সমানভাবে অনিয়ম চলছে।’
সাংবাদিক, ব্যবসায়ী ও সাধারণ ক্রেতারা এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে প্রশাসনের কাছে সঠিক তদন্ত দাবি করেছেন।
গুলশানে সাংবাদিক মুনজুরুল করিমের কফিশপ ভাঙচুর শুধু একটি দোকান ভাঙচুরের ঘটনা নয়—এটি ব্যবসায়ী মহলের আস্থা, বিনিয়োগ এবং আইনের সমান প্রয়োগের প্রশ্নও তুলে ধরেছে। এখন দেখার বিষয়, প্রশাসন এই ঘটনার স্বচ্ছ তদন্ত করে কি না, নাকি এটি গোপন স্বার্থের আড়ালে চাপা পড়ে যায়। তথ্যসূত্র
📰আরো পড়ুন:☞ খাদ্যে বিষক্রিয়ায় হাসপাতালে বলিউডের ১০০ জন! শুটিং ইউনিটে হাহাকার লেহে