কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলা প্রতিনিধি,মো:শাহরিয়া: সম্প্রতি কুমিল্লা ডিসি অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজ জানান জনস্বার্থে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও অপরাধ প্রতিরোধ কার্যক্রম কার্যকর করার জন্য অদ্য ১৮/০৭/২০২৫ তারিখ চৌদ্দগ্রাম উপজেলার মুন্সিরহাট ইউনিয়ন এর বৈলপুর গ্রামে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়। অভিযান পরিচালনা করেন জাকিয়া সরওয়ার লিমা, এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি), চৌদ্দগ্রাম, কুমিল্লা। অভিযান পরিচালনায় সহায়তা করেন মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা, চৌদ্দগ্রাম ও চৌদ্দগ্রাম থানা পুলিশের একটি টীম।
চৌদ্দগ্রাম উপজেলার মুন্সিরহাট ইউনিয়নের বৈলপুর গ্রামে বাল্যবিবাহ হচ্ছে মর্মে খবরের প্রেক্ষিতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনাকালে দেখা যায়, আইন অনুযায়ী বিবাহের উপযুক্ত বয়স ( পুরুষের ক্ষেত্রে ২১ বছর, মহিলাদের ক্ষেত্রে ১৮ বছর) হওয়ার পূর্বেই সানজিদা আক্তার (বয়স: ১৫ বছর) , পিতা: আমিনুল হক, মাতা: আয়েশা বেগম নামের এক অপ্রাপ্ত বয়স্ক কন্যার বিবাহ সম্পন্ন করার আয়োজন করা হয়েছে।
অভিযানকালে সানজিদা আক্তার (বয়স: ১৫ বছর) এর মাতাকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি বলেন তার কন্যার বয়স ১৮ বছর হয়েছে। বয়স প্রমাণের জন্য জন্ম নিবন্ধন সনদ/এন আইডি/শিক্ষাগত সনদ দেখতে চাইলে তিনি সানজিদা আক্তারের বিয়ে নোটারী পাবলিক (স্থানীয়ভাবে কোর্ট ম্যারেজ নামে পরিচিত) এর মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। এ প্রেক্ষিতে তিনি প্রমাণক হিসেবে নোটারী পাবলিক ডকুমেন্ট দেখায়, যেখানে সানজিদা আক্তারের জন্ম তারিখ ৩১/০৫/ ২০০৬ ইং হিসেবে দেখানো হয়েছে এবং জানানো হয় যে জন্মসনদ এখনো করা হয়নি।কিন্তু বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট কনেকে দেখে বয়স নিয়ে সন্দেহ হওয়ায় এবং পরিবার তথ্য গোপন করছেন মর্মে তাঁর নিকট প্রতীয়মাণ হওয়ায় অত্যন্ত সুকৌশলে জন্ম নিবন্ধন সনদ উদঘাটন করতে সক্ষম হন, যেখানে পর্যালোচনায় দেখা যায় তার জন্ম তারিখ ৩১/০৫/২০১০ ইং।
কাজেই এটি স্পষ্ট যে জন্মসনদে সঠিক বয়স উল্লেখ থাকা সত্ত্বেও নোটারি পাবলিক, কুমিল্লা অপ্রাপ্ত বয়স্ক কন্যার বয়স গোপন করে ভুয়া বয়স উল্লেখ করে বিবাহের কার্যক্রম সম্পন্ন করেন, যা বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন, ২০১৭ এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
সানজিদা আক্তার (বয়স: ১৫ বছর) এর পরিবার উক্ত আইন অমান্য করে এবং নোটারী পাবলিকের মাধ্যমে বয়স গোপন করে অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়ের বাল্যবিবাহ সম্পাদন বা পরিচালনা করার অপরাধে ‘বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন, ২০১৭’ এর বিধান মোতাবেক ২৫০০০/- (পঁচিশ হাজার টাকা) অর্থদণ্ড, তৎক্ষণাৎ অনাদায়ে ১৫ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয় এবং বাল্যবিবাহ বন্ধ করা হয়৷ উল্লেখ্য দণ্ডিত অর্থদণ্ড তৎক্ষণাৎ আদায় করে সানজিদা আক্তার এবং তার মাতা আয়েশা বেগম এর যৌথ স্বাক্ষরিত ভবিষ্যতে বাল্যবিবাহের সাথে সংশ্লিষ্ট হবে না মর্মে মুচলেকা গ্রহণ করা হয়।
সার্বিক পর্যালোচনায় এটি প্রতীয়মাণ হয় যে নোটারী পাবলিক (স্থানীয়ভাবে কোর্ট ম্যারেজ হিসেবে পরিচিত) এর মাধ্যমে অধিকাংশ বাল্যবিবাহ সম্পন্ন হওয়ায়, নোটারী পাবলিকের ভুয়া বয়সের প্রত্যয়ন রাষ্ট্রের ‘বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন, ২০১৭’ এর যথাযথ বাস্তবায়নের অন্তরায়।