📰 নতুন নীতিমালা চূড়ান্তের পথে, শৃঙ্খলার আওতায় আসছে বৈদ্যুতিক থ্রি-হুইলার।
সারাদেশে ট্রাফিক বিশৃঙ্খলার বড় একটি কারণ হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসা ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা (ইজিবাইক) অবশেষে একটি নির্দিষ্ট নীতিমালার আওতায় আসছে। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ ‘বৈদ্যুতিক থ্রি-হুইলার ব্যবস্থাপনা নীতিমালা ২০২৫’ এর খসড়া তৈরি করেছে। খসড়া অনুযায়ী, এসব অটোরিকশা চালাতে হলে নিবন্ধন ও চালকের লাইসেন্স বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে।
সরকারি সূত্রে জানা গেছে, মহাসড়কে এসব থ্রি-হুইলারের নিয়ন্ত্রণহীন চলাচল দুর্ঘটনা এবং যানজট সৃষ্টি করছে। সারাদেশে অনুমানিক ৫০ লাখের বেশি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল করছে, যার মধ্যে ঢাকায় রয়েছে অন্তত ৮ থেকে ১০ লাখ। এতদিন এসব যানবাহনের ওপর কোনো নির্দিষ্ট আইন বা নীতিমালা ছিল না।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব নিখিল কুমার দাস জানিয়েছেন, “থ্রি-হুইলারগুলোকে শৃঙ্খলায় আনতেই দীর্ঘদিন ধরে একটি নীতিমালার দাবি ছিল। এবার বাস্তবতার নিরিখে খসড়াটি চূড়ান্ত করার কাজ চলছে।”
👉কোথায় চলবে, কোথায় নয়?
খসড়া নীতিমালায় বলা হয়েছে, মধ্যম ও ধীরগতির অটোরিকশাগুলো মহাসড়কে চলতে পারবে না। তবে সার্ভিস লেনে চলাচল করতে পারবে। সিটি করপোরেশন ও এ ক্যাটাগরির পৌর এলাকায় মধ্যমগতির অটোটেম্পো, মোটরক্যাব রিকশা, থ্রি-হুইল ভ্যান চলাচল করতে পারবে। অন্যদিকে ধীরগতির যান চলবে শুধুমাত্র জেলা, মেট্রোপলিটন, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের স্থানীয় রুটে।
👉নিবন্ধন ও লাইসেন্স বাধ্যতামূলক
বিআরটিএর মাধ্যমে নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে এসব অটোরিকশার নিবন্ধন দেওয়া হবে। কোনো ব্যক্তি সর্বোচ্চ ৩টি মধ্যমগতি ও ৫টি ধীরগতির অটোরিকশার মালিক হতে পারবেন। চালকদের বিআরটিএ অনুমোদিত প্রশিক্ষণ নিতে হবে এবং বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স সঙ্গে রাখতে হবে।
👉ফিটনেস ও যন্ত্রাংশে মান নিয়ন্ত্রণ
এজাতীয় যানবাহনের ফিটনেস সনদ, হালনাগাদ ট্যাক্স টোকেন, বিএসটিআই অনুমোদিত যন্ত্রাংশ ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। বিআরটিএর অনুমোদন ছাড়া কোনো প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান যানবাহন তৈরি বা বাজারজাত করতে পারবে না।
👉গতি ও আকার নির্ধারণ
মধ্যমগতির অটোরিকশার সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ৫০ কিমি এবং ধীরগতির গতি ঘণ্টায় ৩০ কিমি নির্ধারণ করা হয়েছে। দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও ওজনেরও নির্দিষ্ট সীমা দেওয়া হয়েছে।
👉এক বছরের মধ্যে নিরাপদ মডেলে রূপান্তরের নির্দেশ
বর্তমানে চলমান অননুমোদিত থ্রি-হুইলারকে এক বছরের মধ্যে নিরাপদ মডেলে রূপান্তর করতে বলা হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের পর এসব যানবাহনের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
👉সড়ক পরিবহন আইনে ব্যবস্থা
নীতিমালার ব্যত্যয় হলে ‘সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮’-এর আওতায় কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রশিক্ষণ ছাড়া কেউ এ যান চালাতে পারবে না। যাত্রীদের সুবিধার্থে প্রতিটি অটোরিকশায় মালিক ও চালকের মোবাইল নম্বর দৃশ্যমান রাখতে হবে।
👉নীতিমালাটি চূড়ান্ত হলে দেশের সড়কে চলাচলকারী লাখো ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাকে আইনি কাঠামোতে আনার পাশাপাশি জননিরাপত্তা, ট্রাফিক শৃঙ্খলা ও যানজট সমস্যার নিরসনে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।